loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

মাহমুদউল্লাহ ঝলকে বাংলাদেশ ফাইনালে


মাহমুদউল্লাহ ঝলকে বাংলাদেশ ফাইনালে

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলার শুরুর আগে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ইস্যু সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করেছিলো ক্রিকেট অঙ্গনে - তিনি খেলবেন কি-না। অবশেষে অধিনায়ক হিসেবে টস লড়াইয়ে নামেন সাকিব। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৬ রান। ম্যাচ সেরা মাহমুদউল্লাহ সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন দারুণ এক ফ্লিক শটে। ইশুরু উদানাকে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে নিদাহাস কাপের ফাইনালে তুলেছেন তিনি। তার আগে নো বল না দেওয়া নিয়ে খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল বাংলাদেশ।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শুক্রবার (১৬ মার্চ) বারবার রঙ বদলানো ম্যাচে বাংলাদেশ ১ বল হাতে রেখে জিতেছে ২ উইকেটে। এই জয়ে ত্রিদেশীয় নিদাহাস কাপের ফাইনালে উঠল সাকিব আল হাসানের দল। ১৮ মার্চ ফাইনালের সাকিবদের প্রতিপক্ষ ভারত।

১৮ বলে ৩ চার আর ২ ছক্কায় ৪৩ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের হিরো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ঝলকে ঢাকা পড়ে গেছে তামিম ইকবালের অর্ধশতক।

শেষ দুই ওভারে দরকার ২৩ রান। মাত্রই আউট হয়ে গেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, পড়ে গেছে ৬ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন বলে তখনও বেঁচে আছে বাংলাদেশের আশা। ওই ওভারে এলাে ১১ রান। রান আউটে কাটা পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ ওভারে দরকার ১২। সবচেয়ে বড় কথা স্ট্রাইকে নেই মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারটাই হলো নাটকীয়তায় ভরপুর।

নতুন ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমানকে বাউন্সারে পরাস্ত করলেন ইশুরু উদানা। পরের বলে আবার বাউন্সার। এবার বাউন্সারে পরাস্ত হলেও রান নিতে গেলেন ব্যাটসম্যানরা। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছার আগেই রান আউট মোস্তাফিজ। তবে দুই বাউন্সারের কারণে নো বল ডাকার আবেদন করে বাংলাদেশ। তর্কবিতর্ক শেষে ব্যাটসম্যানদের খেলা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশও দেন অধিনায়ক সাকিব। পরে খেলতে রাজী হয় বাংলাদেশ। পরের বলেই চার মেরে দলকে খেলায় ফেরান মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে নেন ২ রান। তার পরের বল ফ্লিক করে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে যাদুময় মুহুর্ত এনে দেন মাহমুদউল্লাহ।

১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় নড়বড়ে। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২১৫ রান তাড়ায় ব্যাটে তান্ডব তুলেছিলেন লিটন দাস। এবার তিনি আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। আকিলা ধনঞ্জয়ার অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল না লাগালে ওয়াইড পেতেন। সেই বলে বেরিয়ে এসে ক্যাচ দেন মিড অনে।

ডান-বাম সমন্বয় রাখতে এক নম্বরে প্রোমোশন পাওয়া সাব্বির রহমান দুই চারে শুরুর পর হয়েছেন স্টাম্পিং। ৩৩ রানে দুই উইকেট হারালেও পথ হারায়নি বাংলাদেশ। দারুণ ফর্মে থাকা মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন তামিম ইকবাল। এই দুজনের ৬৪ রানের জুটিতে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।

একটা সময় মনে হচ্ছিল সহজ জয়ের পথেই আছে বাংলাদেশ। তখনই বাঁহাতি স্পিনার আমিলা আপনসোর বলে ক্যাচ দেন কাভারে। অর্ধশতক করার পরই গুনাথিলাকাকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তামিম। এদিন পাঁচ নম্বরে নামা সৌম্য সরকার প্রায়ই একইভাবে আউট হন ১০ রান করে। হঠাৎ ছন্দপতন। তবু মাহমদুউল্লাহ আর সাকিব তো আছে। সমীকরণও কঠিন না। শেষ চার ওভারে দরকার ছিলো ৪০ রান। ১১ রান তুলে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশই। ১৮তম ওভারে ফের মোড় ঘোরান ইশুরু উদানা। মাত্র ৬ রান দিয়ে আউট করে ফেলেন সাকিবকে। শেষ দিকে জড়ো হওয়া শঙ্কার মেঘ সরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাথা ঠান্ডা রেখে দলকে জিতিয়েই উল্লাস করেন।

শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশের বোলাররা। তবে কুশল পেরেরা আর থিসারা পেরেরা মিলে টেনে তুলেন স্বাগতিকদের। এই দুজনের অর্ধশতকে ২০ ওভারে ১৫৯  উইকেটে রান করে শ্রীলঙ্কা। কিছুটা মন্থর পিচে এই পুঁজিই হয়ে যায় লড়াই করার জন্য যথেষ্ট।

৩৯ বলে ৬১ রান করে ফেরেন কুশল পেরেরা। অধিনায়ক থিসারার ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৫৮ রানের কার্যকর ইনিংস। অথচ এই দুজনের ব্যাটিংয়ের আগে রীতিমতো ধংসস্তুপ ছিল লঙ্কানদের ইনিংস।

দেড় মাস পর এই ম্যাচ দিয়েই মাঠে ফিরলেন সাকিব। টস জিতে নিজেই প্রথম বলটা হাতে নেন। প্রথম উইকেটটাও তাঁর পকেটে যায়। সেই শুরু। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দল সঙ্গে সঙ্গে তেতে উঠে। প্রথম ৬ ওভারে ৩৫ রানের মধ্যেই লঙ্কানদের চার উইকেট তুলে যেন টগবগিয়ে ফুটলাে টাইগাররা।

এই প্রতিযোগিতায় এখনো নিজের সেরাটা খুঁজে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান উঠলেন জেগে। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে নিলেন দুই উইকেট। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের তিন ম্যাচেই তিন অর্ধশতক করা কুশল মেন্ডিস ও রানের ঝড় তোলা দাসুন শানাকার উইকেট নেওয়ার মাঝে তাঁর ওভারেই রান আউট হয়ে ফিরলেন উপুল থারাঙ্গা।

আগের ম্যাচে মার খেলেও এই খেলায় মেহেদী হাসান মিরাজও যেন পেলেন ছন্দ। তাঁর বলে টাইমিংয়ে ভুল করে আউট হন জীবন মেন্ডিস। ৪১ রানে লঙ্কানদের অর্ধেক ব্যাটসম্যান নেই। তবে আশা হয়ে টিকে ছিলেন কুশল পেরেরা। তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থিসেরা পেরেরা। দুজনে মিলে উইকেট খানিকটা সময় কাটালেন। থিতু হয়ে খুললেন হাত। মোস্তাফিজের তিন নম্বর ওভার থেকে নেন ১৮ রান। চালকের আসন হারিয়ে বসা স্বাগতিকরা তখনই ফিরতে শুরু করে ম্যাচে। ৩২ বলে ৫০ রান করে ফেলেন কুশল পেরেরা।

বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুকে এক ওভারও বল করতে আনা হয়নি। প্রথম দুই ওভার দারুণ বল করেও ক্রিজে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেখে আর বল করতে আসেননি সাকিব। মোস্তাফিজের শেষ ওভারেও ১৭ রান তুললেন থিসারা। ১৯তম ওভারে সৌম্য সরকারের বলে ফেরেন পেরেরা। তবে তার আগে ৩৯ বলে ৬১ রান। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ততক্ষণে হয়ে গেছে ৯৭ রান। ওই ওভারেই সৌম্যর বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৩ বলে অর্ধশতক পূরণ করেন অধিনায়ক থিসারা। লঙ্কানরা পায় লড়াইয়ের পুঁজি।

তবে থিসারাদের মাঠে ম্যাচ শেষে উল্লাস করেছে সাকিব-মাহমুদউল্লাহরাই। গত মাসে বাংলাদেশের মাঠে এসে সিরিজগুলো জিতেছিলো শ্রীলঙ্কা। এবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে অনেকটাই যেন শোধ তুলল বাংলাদেশ।

Loading...