বাংলাদেশের আকাশে শুক্রবার (১৫ জুন) চাঁদ দেখা গেলে শনিবার (১৬ জুন) পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হবে। যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা এদিন তাঁদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা পবিত্র রমজানে একমাস সিয়াম পালন করে এখন ঈদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এবার বাড়তি সর্তকতা হিসেবে জাতীয় ঈদগাহে বজ্রনিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোন অনিবার্য কারণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদ-জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে, ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ঈদগাহে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আজ থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্রবাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোষ্টে প্রদর্শন করা হবে। ঈদ-উল-ফিতরের আগের রাতে সরকারি ভবনসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে।
সারাদেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে নিজস্ব কর্মসূচী অনুযায়ী করে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করবে। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দু:স্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সংগতিপূর্ণ ডকুমেন্টারী ফিল্ম বা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুদের মধ্যে চকলেট বা চিপস বিতরণের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কিছু আর্থিক অনুদান প্রদান করছে।
ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনাটিকেটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এর পরপর আরো ৪টি জামাত হবে যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায়।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতরের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪ বা ৫টি করে মোট ৪০৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)’র ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৪টি করে এবং জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠসহ মোট ২৩০টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)’র ৩৬টি ওয়ার্ডের মোট ১৭৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে ও শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিল ও বনানী দরবার শরীফে সকাল সাড়ে ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া রাজধানীর আরামবাগে দেওয়ানবাগ শরীফে ঈদের ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৮টা, দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে ৯টা এবং শেষ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবার ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে শোলাকিয়ায়। প্রতিবছরের মতো এবারও জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ।
ঈদ উপলক্ষে মুসলিমদের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (১৪ জুন) মধ্যপ্রাচ্যে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সেখানে শুক্রবার (১৫ জুন) পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
