loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

‘মানব-পাচার রোধে ট্রাইবুনাল গঠনের বিকল্প নেই’


‘মানব-পাচার রোধে ট্রাইবুনাল গঠনের বিকল্প নেই’

মানবপাচার-সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ট্রাইবুনাল গঠনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশিরা নির্যাতন নিপীড়নের যে-ভয়াবহ বর্ণনা দেন সেগুলো মেনে নেয়া কঠিন। শুধু চুনোপুটিদের ধরে মানব-পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়, ধরতে হবে রাঘববোয়ালদের - যাঁরা দেশে-বিদেশে বসে আছে।

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত মানব-পাচার বিষয়ক এক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে এই সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পাচারের শিকার ব্যক্তিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন।  

অনুষ্ঠানে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি ছাড়া অন্যটি হতে পারে না। তিনি বলেন, অনেক সময় তথ্য না জানার কারণে মানুষ পাচারের শিকার হয়। অনেকে ভাষা জানে না। যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন তাঁদের যাওয়ার আগেই যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি পাচারের শিকার কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার কাজটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রয়োজনে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাইবুনাল গঠন এখন শুধু দাবির পর্যায়ে নেই, অনেকটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে চলে গেছে। পাচারের মতো অপরাধ দমনে সরকারি বেসরকারি সংস্থা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, যেকোনো উপায়ে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বিপদে না পড়লে অনেক সময় মানুষ তথ্য জানায় না। তবে রোহিঙ্গাদের পাচার বন্ধসহ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার দিকে সরকার নজর দিচ্ছে। মানবপাচারের মামলাগুলো দেখার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সব সমস্যার মূলে রয়েছে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়া। যেসব দেশ থেকে লোকে বিদেশে কাজ করতে যায়, বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর একটি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। 

অনুষ্ঠানের আরেকজন বিশেষ অতিথি ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, মানব-পাচার শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের জন্যই সমস্যা। সবাই মিলে কাজ করলে রাতারাতি না হলেও যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে ট্রাইবুনাল গঠন হতে পারে একটা কার্যকরী উদ্যোগ। অভিবাসন সমস্যাসহ সামাজিক যেকোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে ব্র্যাক বদ্ধপরিকর এবং সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। 

অনুষ্ঠানের আলোচক ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, এটি কোন দাবির বিষয় নয়। মানব-পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করতেই হবে। বাংলাদেশ এখন মানবপাচার-বিষয়ক প্রতিবেদনের টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে আছে। ভয়াবহ বিপর্যয় হওয়ার আগেই সমস্যার সমাধান করা জরুরি। 

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, সবাইকে সচেতন করার বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। 

উইনরক ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি লিসবেথ জনিভেল্ড বলেন, মানবপাচার সার বিশ্বের একটা সমস্যা। একসঙ্গে মিলেই সমাধান করতে হবে। 

অনুষ্ঠানের মানবপাচার-বিষয়ক মূল প্রবন্ধে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ  থেকে মানব-পাচারের সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মানব-পাচার আইন হওয়ার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা হলেও নিষ্পত্তির ঘটনা খুবই সামান্য। পাচাররোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানব-পাচার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রম অভিবাসনের নামেও পাচার বাড়ছে। মানবপাচার-বিষয়ক মামলাগুলোর নিষ্পত্তি  করতে দ্রুত ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের নির্ধারিত বাজেট দেয়া উচিত। অন্তত যেসব জেলায় মামলা বেশি এমন পাঁচটি জেলায় হলেও সরকার ট্রাইবুন্যাল করুক। 

অনুষ্ঠানে সিরিয়ায় পাচার হওয়া একজন নারী তাঁর নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

 – সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

Loading...