ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ীরা সব শিক্ষার্থীর জন্য কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “যে নির্বাচিত হয়েছে, সে সব শিক্ষার্থীর জন্যই কাজ করবে। কে হলো, কে হলো না সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। ভোটটা সুষ্ঠু হোক।” শনিবার (১৬ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে নবনির্বাচিত ডাকসু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদের নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তাঁদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সাহস থাকা ভালো। তবে আন্দোলনে সুযোগসন্ধানীরা থাকে। তাঁদের ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে ছাত্রনেতাদের।
তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব খুঁজি। আর ছাত্রজীবন থেকেই তা গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য স্কুল পর্যায়ে ক্যাবিনেট চালু হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আগে রাজনীতির পরিবেশ এত সুষ্ঠু ছিল না। এখন সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। নেতৃত্ব তুলে আনতে এই ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এ-সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানমঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং ডাকসু’র নবনির্বাচিত ভিপি ও কোটা-সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর। ডাকসু’র জিএস ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এদের মধ্য থেকে বক্তব্য দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, নুরুল হক নুর, গোলাম রাব্বানী প্রমুখ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, কোটা আন্দোলন করছে, যুক্তি দিয়ে আন্দোলনের বিষয়টি বলতে হবে। কিন্তু ভিসি’র বাড়িতে আক্রমণ! তাঁর বেডরুম পর্যন্তু যাওয়া, ভিসির গাড়িতে আগুন দেওয়া - কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কোটা আন্দোলনের নামে এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সময়েও ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান-ধর্মঘট করা হতো। খুব বেশি কিছু হলে ভিসির বাড়ির ফুলের টব ভাঙা হতো।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাবি’র ছাত্রী হলগুলোতে অস্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারিনি। যখন জেনেছি ছাত্রীরা নিরাপদে হলে ফিরে গেছে, তখন বিশ্রামে গিয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। গুলি-বোমা ছিল প্রতিদিনকার ব্যাপার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
“শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা কেন থাকবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো লেখাপড়ার জায়গা। তবে এখন এটা স্বস্তির যে, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়নি।”
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানান।
এর আগে ডাকসু’র নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে নিজের মায়ের ছায়া দেখতে পান বলে জানান। তিনি বলেন, “আমি আড়াই বছর বয়সে মাকে হারাই। ছোটবেলায় আমার একজন স্কুল শিক্ষিকার মাঝে মায়ের ছায়া দেখতে পেয়েছি। এখন আরেকজনের মধ্যে আমি মাতৃত্বকে খুঁজে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর মাঝে আমি মাতৃত্বের ছায়া খুঁজে পেয়েছি।”
শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্ব ও উন্নয়নকাজ বিশ্বে তাঁকে প্রশংসনীয় অবস্থানে নিয়েছে উল্লেখ করে ডাকসু কার্যকরে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন নুর।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছলে নুরুল হক নুর তাকে কদমবুসি করে দোয়া চান। প্রধানমন্ত্রী তার মাথায়-কাঁধে হাত রেখে দোয়া করেন। এ সময় ডাকসু’র নবনির্বাচিত জিএস গোলাম রাব্বানী ও পরাজিত ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হাস্যজ্জ্বল মুখে প্রধানমন্ত্রীর দু'পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।