loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত


শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত

গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশে শনিবার (১১ জ্যৈষ্ঠ) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) ১২০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। নজরুলের সৃষ্টকর্ম নিয়ে আলোচনা, আবৃত্তি, গান ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে কবি বন্দনায় মুখর ছিল পুরো দেশ। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

জাতীয় পর্যায়ে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। এ-বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হয়েছে নজরুল-স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী এমপি ও জাতীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল।

এবার কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয় ‘নজরুল-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় তাঁর ১২০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (২৫ মে) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চিরনিন্দ্রায় শায়িত কবির সমাধিতে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় জাতীয় কবির সমাধি।

সকালে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে রাজধানীতে তাঁর জন্মবার্ষিকী পালনের সূচনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ জাতীয় কবির সমাধিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে সকাল সোয়া সাতটায় পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জমানসহ শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, হল সংসদ, শিক্ষক সমিতিসহ ছাত্র-ছাত্রীরা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কবির সমাধিতে জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। 

সকাল সাড়ে আটটায় জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের উদ্যোগে সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিতত্ব করেন ঢাবি উপাচার্য ড. মো: আখতারুজ্জামান।

উপাচার্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার, সম্প্রীতির, সাম্যের ও মানবতার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, নজরুল ইসলাম সবসময় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও অসাম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদী ছিলেন। তাঁর লেখা গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকাল সাড়ে আটটায় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।এসময় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দি , উপদফতর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পরে ১৯৭৬ সালে শোকের মাসেই (১২ ভাদ্র) শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

Loading...