loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃতি এবং এর প্রভাব প্রশমন নিজেদের সক্রিয় উদ্যোগ সম্পর্কে আরো সচেতন হতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সচেতন থাকতে এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করছি।”

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দু’দিনব্যাপী জলবায়ু-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন’ (জিসিএ)-এর ঢাকা বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবন ও অর্থায়নের যুগে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে - যা সকলে সহজে কাজে লাগাতে পারি।”

“তথাপি আমি বলতে চাই, অভিযোজনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেজন্য সুষ্ঠু প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অভিযোজন প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না,” বলেছেন তিনি।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলডা সি. হেইনা, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন-এর চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন এবং সম্মেলনের কো-চেয়ার এবং বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা সম্মেলনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ ও কৌশল সম্পর্কে বান-কি-মুন বলেন, “অবশ্যই আমরা এখানে বাংলাদেশের কাছে শিখতে এসেছি। অভিযোজনের বিষয়ে শেখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো শিক্ষক।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাবউদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল কমিশন অফ অ্যাডাপ্টেশন’র সহযোগিতায় আমরা জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক অভিযোজন কৌশলের পাশাপাশি সাশ্রয়ী পন্থা ও ঝুঁকি নিরসন ব্যবস্থার সুবিধা পেতে চাই।

তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছি আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানে অনুষ্ঠেয় ক্লাইমেট চেইঞ্জ সামিটের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর জন্য। ওই সম্মেলনে এলডিসিভুক্ত দেশসমূহ ও বাংলাদেশর পক্ষ থেকে আমাকে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

বাংলাদেশে ‘রিজিওনাল অ্যাডাপ্টেশন সেন্টার’ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “অভিযোজন প্রক্রিয়ায় অগ্রগামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের দাবী রাখে। আমি বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক অভিযোজন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করতে আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি।”

তিনি এ-ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়ায় বান-কি মুনকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন ঢাকা সম্মেলনের সার্বিক সাফল্য কামনা করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব অনুমিত সময়ের আগেই আমাদের প্রত্যেকের ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেজন্য, এর প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বকে বিনিয়োগে আরও বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমি শুধু নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে অনেক ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে। তখন সেখানকার মানুষেরা কোথায় যাবে, সে-কথাও আমাদের ভাবতে হবে।”

শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, “তাঁদেরকে আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাঁদের কারণে আমাদের ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ওখানে আমাদের যতো পাহাড়ি এলাকা বা জঙ্গল ছিল সেগুলো কেটে-ছেঁটে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে এলাকাটি অনেকটা অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এজন্য আমরা চাই দ্রুততম সময়ে তাঁরা নিজ দেশে ফেরত যাক। তাঁরা যতো তাড়াতাড়ি নিজেদের দেশে ফিরে যাবেন, ততোই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।”

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় হুমকি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রাক-শিল্পস্তরের চেয়ে প্রায় এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উপরে পৌঁছেছে।”

তিনি বলেন, “জার্মান ওয়াচ’র ক্লাইমেট চেঞ্জ ভার্নাবিলিটি ইনডেক্স-২০১৮ অনুসারে, ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৬ সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে ছিল ৬ষ্ঠ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এডিবি’র জলবায়ু ও অর্থনীতিবিষয়ক প্রতিবেদনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আমাদের বার্ষিক জিডিপি দুই শতাংশ কমে যাবে। যদি বর্তমান হারে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আমাদের ১৯টি উপকূলীয় জেলা স্থায়ীভাবে ডুবে যাবে।”

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রতল ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ বলছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬০ লাখ জলবায়ু অভিবাসী রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে, ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।”

তিনি বলেন, তাঁর সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে যে বিশাল উন্নতি হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাবে আজ তা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।

জনগণের জন্য অভিযোজন ব্যবস্থা তৈরি করতে তাঁর সরকারের নিরলসভাবে কাজ করার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “গত এক দশকে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসমূহ অভিযোজনের মাধ্যমে নিরসনের জন্য বছরে প্রায় একশো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করছি।”

এ-সময় তিনি জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন এবং বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচির জন্য ৪২ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি এই ফান্ডে বরাদ্দের কথাও উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ-সময় নেদারল্যান্ডের সহযোগিতায় প্রণীত শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবিলার জন্য আমরা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।”

তিনি প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অর্থপূর্ণ সহযোগিতার জন্য ২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্ব সম্প্রদায় একটি সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সফল হয়েছে।

তিনি বলেন, “অনেকের মতো আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিকভাবে আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। প্যারিস চুক্তি হলো এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত এবং কার্যকর বৈশ্বিকচুক্তি।”

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “বান কি মুন-এর উদ্যোগে গঠিত পানিবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম (এইচএলপিডাব্লিউ)-এর চূড়ান্ত রিপোর্টে আমরা সংযোজন করেছি - ‘এভরি ড্রপ কাউন্টস’ অর্থাৎ ‘প্রতি ফোটা মূল্যবান।’ যেটি বিশ্বসম্প্রদায় বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশের বিভিন্ন সময়ের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন এবং দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি লাঘবে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

সরকার প্রধান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় আমরা নিজস্ব কৌশল অবলম্বন করেছি। লবণাক্ততা, বন্যা ও ক্ষরা সহিষ্ণু ফসলের প্রজাতি উদ্ভাবন এবং চাষের মাধ্যমে এ-বিষয়ে আমাদের সক্ষমতা গড়ে তুলেছি।”

এ-বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আজকে সকলের সামনে উপস্থাপনের এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭২টি মুজিব কেল্লা (সাইক্লোন শেল্টার) নির্মাণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় পথ সৃষ্টি করেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু- কন্যা বলেন, “জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) গ্রহণ করেন। সিপিপি’র বর্তমানে ৪৯ হাজার ৩শ’ ৬৫ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।”

জাতির পিতা সে সময় ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের এক বাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হন বলে তিনি জানান।

তাঁর সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশে কমে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকার জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ৩৭৮টি মুজিব কেল্লা নির্মাণ করছে। এছাড়া, দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৩,৮৬৮টি বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১,৬৫০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হবে।”

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষকলীগের আষাঢ় মাসে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যাপক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আগামী ৫ বছরে দেশের ২২ থেকে ২৪ ভাগ অঞ্চল গাছপালায় আচ্ছাদিত হবে।”

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দুই লাখ হেক্টর উপকূলীয়-বনায়ন সৃষ্টি করে সবুজ-বেষ্টনীর মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূল অঞ্চলকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলভাবে ৬ লাখ ১ হাজার ৭শ’ হেক্টর এলাকার সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বনের ব্যবস্থাপনা করছে।” জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে এক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

Loading...