ঢাকা ও সিউলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক-বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশে তিনদিনের সরকারি সফর শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন আজ ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তাঁকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিদায়ের আগে, বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকষ দল প্রধানমন্ত্রী লিকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী লি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা এবং নিউরোডেভলপমেন্ট ডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম-এর জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন তাঁকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে অভ্যর্থনা জানান। তিনি কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে জাতির পিতার ইতিহাস ব্রিফ করেন।
লি রোববার বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এ-সময় কোরিয়ার বাজারে সকল বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে সিউলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
বৈঠককালে শেখ হাসিনা কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি রোহিঙ্গা-সংকটের শান্তিপূর্ণ আশু সমাধানের জন্য মায়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শন্তির জন্য হুমকি। এ-সময় কোরীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা-সংকট সমাধানে দক্ষিণ কোরিয়া সম্ভাব্য সবকিছু করবে বলে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন।
লি আরও বলেন, তাঁর সরকার দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিবেচনা করবে। তিনি বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
এ-প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কোরিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে বিনিয়োগ করতে পারে। এটি জি টু জি ও পিপিপি মডেলের আওতায় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
লি রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সাথে রোববার দেখা করেছেন। এ-সময় তিনি বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের রূপকল্প-২০৪১ এর লক্ষ্য পূরণের (উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার) ক্ষেত্রে সবসময় পাশে থাকবে।
একইদিন প্রধানমন্ত্রী লি কোরিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (কেআইটিএ) এবং দি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) রাজধানীতে যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে লি দু’দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোরিয়া দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে জ্বালানি, অবকাঠামো, আইসিটি ও হাইটেক খাতগুলোকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী লি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তিনি সাভার ইপিজেড- এর একটি কোরীয় কারখানা ও ঢাকার মুগদাপাড়ায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্স নার্সিং এজুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ পরিদর্শন করেন।