loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

সোনার বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করবো: প্রধানমন্ত্রী


সোনার বাংলাদেশ গড়ে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করবো: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় আশাবাদ পূণর্ব্যক্ত করে বলেছেন, এর মাধ্যমেই আমরা জাতির পিতার রক্তঋণ শোধ করবো। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন,প্রয়োজনে বুকের রক্ত দেবো। আর সেই রক্তই তিনি দিয়ে গেছেন। আর আমাদের সেই রক্তঋণ শোধ করতে হবে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘পিতা তোমাকে কথা দিলাম আজকের দিনে, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। এটাই আমাদের অঙ্গীকার ।’

প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার (১৬ অগাস্ট) বঙ্গবন্ধুর ৪৪ তম শাহাদাত-বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে আছে। সেই আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি।

এ সময় এদেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে এবং সম্মান ধরে রেখে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি শুধু এইটুকুই বলবো আজকের দিনে শোকগাঁথা বুকে নিয়েও এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শুধু আমার বাবার কথা চিন্তা করেই, তিনি কিভাবে কষ্ট সহ্য করেছেন, কিভাবে জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন এই দেশের জন্য।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মেরিনা জামান অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন।

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই চরম আঘাতটা আসে। অথচ তিনি বেঁচে থাকলে অথবা আর ৩/৪টা বছর বেঁচে থাকলেই বাঙালি জাতিকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে আসতেন।

তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে অনাহার অর্ধাহারে থাকার কষ্ট, বোমাবাজি, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের কষ্ট আর ভোগ করতে হতো না। বাংলাদেশ বিশ্বে অনেক আগেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো।

তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাকরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘সব হারিয়ে পেয়েছিলাম লাখো মানুষ। তাঁদেরকে আপন করে নিয়েছি। আর আওয়ামী লীগের অগণিত নেতা-কর্মী, মুজিব আদর্শের সৈনিক - তাঁরাই আমাকে আপন করে নিয়েছে। সেখানেই পেয়েছি বাবা-মা-ভাইয়ের ভালোবাসা। এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিষই মাথায় রেখেছি যে - আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন, এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এদেশের মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ করে দিতে হবে, উন্নত জীবন দিতে হবে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে এসেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ সারাবিশ্ব বাংলাদেশের দিতে তাকিয়ে থাকে। তাঁরা অবাক হয়, এতো দ্রুত কিভাবে একটা দেশ উন্নত হতে পারে?’

উত্তরে তিনিই বলেন, ‘হতে পারে তখনি যখন একটি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যাঁরা ত্যাগ স্বীকার করে এবং নীতি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে, তাঁরা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলেই একটা জাতি উন্নত হয়, তাহলেই একটা জাতি এগিয়ে যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘যাঁরা পরাজিত শক্তির দোসর - তাঁরা যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে কোনো জাতি এগোয় না, কোনো জাতিই উন্নতি করতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির মাঝে জাতি স্বত্তার উন্মেষ ঘটিয়ে তাঁদেরকে মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

জাতির পিতা শোষিত-বঞ্চিত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত বাঙালিদের একটি সুন্দর সমাজ দিতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁদের জীবন তিনি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের জীবন থেকে ক্ষুধা, দারিদ্রত দূর করতে চেয়েছিলেন। বাঙালি জাতি একটি জাতি হিসেবে যেন গড়ে উঠতে পারে সেটাই তাঁর লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্যটা সামনে নিয়েই তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে যান এবং সমগ্র জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেন স্বাধীনতার মন্ত্রে।’

তিনি বলেন, ‘আর তাই জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়েই এদেশের সাধারণ মানুষ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে বিজয় ছিনিয়ে আনে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।’

আলোচনা সভায় অধিকাংশ বক্তাই ’৭৫-এর ১৫ অগাস্টের প্রেক্ষাপট সৃষ্টির পেছনে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি অংশকে ইন্ধন দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেন।

তাঁদের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা যদি তৎকালীন পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারতেন তাহলে হয়তো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আঘাত আসত না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের বিশাল কর্মযজ্ঞ একদিকে করা, অপরদিকে একটি দেশ, যে দেশটি ছিল পাকিস্তান নামের একটি দেশের একটা প্রদেশ। আর যে ভূখ-টাতে চিরদিন বিদেশিরাই রাজত্ব করেছে। সেই দেশটাকে একটা দেশ হিসেবে, একটা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা-এই কঠিন কাজ মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর দেশ শাসনকালে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেই সময় নানা চক্রান্ত চলেছে- পাটের গুদামে আগুন, থানা লুট করা, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সাতজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা। যাঁরা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, আলবদর বাহিনী অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।’

‘অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তাঁরা একের পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে শুরু করে’, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তখনকার যে একটা অবস্থা সেই অবস্থা বুঝতেই পারেনি। একটা দেশ দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিল, শোষিত ছিল তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা হয়েছে। তাঁরা এত সহজে ছাড়বে না। তাঁদের দোসররা ছিল রন্ধ্রে রন্ধ্রে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত অব্যাহত থাকবে - এই উপলব্ধিটা তখনকার দিনে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতার মধ্যেও আসেনি। তাই তাঁরা এটা হয় নাই, ওটা হয় নাই - নানা ধরনের প্রশ্ন, কথা, লেখালেখি অনেক কিছু শুরু করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষত-বিক্ষত একটা দেশ, অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু একটা দেশ, সেই দেশটাকে গড়ে তোলা যে অত্যন্ত কঠিন-দুরূহ কাজ। এটা যে একদিনেই, একটা কথায় গড়ে ওঠে না - এই উপলব্ধিটা যদি সকলের মাঝে থাকতো তাহলে হয়তো ১৫ অগাস্টের মতো এত বড় একটা আঘাত এ-দেশের ওপর আসতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু তখন কেউ সেই উপলব্ধিটা করে নাই, এটা উপলব্ধি করতে অনেক সময় লেগেছিল তাঁদের। কেন তাঁরা উপলব্ধি করতে পারে নাই, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক জ্ঞানী-গুণী, অনেকেই আছেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সাল পর্যন্ত সে সময়কার বিভিন্ন লেখালেখি এবং পত্র-পত্রিকায় চোখ বুলালেই এসব রাজনীতিকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘কেউ যদি লেখনিগুলোতে একবার চোখ বুলান, পড়েন তখন দেখবেন কতো ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল কথা তাঁরা বলে গিয়েছিলেন। আর সেই খেসারতটা জাতিকে দিতে হলো পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল - সেই আলবদর, রাজাকার, আলশামস এবং পাকিস্তানি বাহিনীর দালাল-দোসর হাতে দেশের ক্ষমতা চলে গিয়েছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।

Loading...