loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

বুয়েট চাইলে ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী


বুয়েট চাইলে ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

দেশে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধের বিষয়কে নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) চাইলে তাঁদের ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করতে পারে। তিনি বলেন, “অনেক প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ। বুয়েট চাইলে তাঁরাও বন্ধ করতে পারে। কিন্তু ছাত্র-রাজনীতি একেবারেই বন্ধ করে দেয়া তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা।”

তিনি বলেন, “বুয়েট-এর ছাত্ররা আছে, সিন্ডিকেট আছে, কমিটি আছে। তাঁরা যদি মনে করে, ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ করে দিতে পারে। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করবো না।”

প্রধানমন্ত্রী বুধবার (৯ অক্টোবর) তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের যোগদানে নিউইয়র্ক সফর এবং এরপর ভারতে সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ-কথা বলেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সর্বাগ্রে ছাত্র-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ছাত্র-রাজনীতি করেই এতদূর এসেছি। দেশের ভালো-মন্দ চিন্তা আমার মাথায় ওই ছাত্রজীবন থেকে আছে বলেই আমরা দেশের জন্য কাজ করতে পারি।”

তিনি বলেন, “কিন্তু যাঁরা উড়ে এসে বসেন, তাঁরা আসেন ক্ষমতাকে উপভোগ করতে। তাঁদের কাছে তো দেশের চিন্তা-ভাবনা থাকে না। এটা শিক্ষা, জানার ও ট্রেনিংয়ের ব্যাপার। এটা ছাত্র-রাজনীতি থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে।”

আইয়ুব সরকারের পথ ধরে জিয়াউর রহমান এবং অন্যান্য স্বৈরাশাসকরা বারবার ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের চরিত্র হনন করে তাঁদের ভোগ-বিলাসের লোভ দেখিয়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের যতো ধরনের শাস্তি আছে সব দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এ-ধরনের ঘটনা না ঘটে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কারো দাবির অপেক্ষায় তো আমি বসে থাকিনি। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এরপর আন্দোলনই বা কীসের জন্য?”

তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “যে বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে তাঁদের কষ্টটা কী সেটা আমি জানি। তাঁকে (আবরার ফাহাদ) নৃশংসভাবে মারা, এটা কেন? যতো রকম শাস্তি আছে - সব দেয়া হবে। কোনো দল দেখা হবে না।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বুয়েট-এর খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে আলামত সংগ্রহের নির্দেশ দেই। যখন পুলিশ আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে, তখন তাঁদের আটকে দেয়া হলো। তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হলো কেন? সেটা জানা দরকার। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল কিনা জানতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমি তো সঙ্গে সঙ্গে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছি ঐ রুমে কারা ছিল সবাইকে অ্যারেস্ট করতে। যাঁরা এ-ধরনের ঘটনা ঘটাবে আমি মেনে নেবো না। ছাত্রলীগকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকেছি, নির্দেশ দিয়েছি ব্যবস্থা নেয়ার।”

রাজধানীসহ সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “নামমাত্র টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও আবাসিক হলে কারা থাকছে, কারা মাস্তানি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।” 

“স্বাধীনতা ভালো তবে তা বালকের জন্য নয়” বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েট-এর ছাত্র-আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি তাঁরা দূরে থাকবে। যাঁরা আন্দোলন করছে করতে থাক। যতদিন খুশি আন্দোলন করতে থাক, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁদের নিজেদের ভেতরেই যদি কিছু হয় তো সেটার দায়িত্ব কে নেবে? সে দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারবো না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ”যাঁরা এভাবে মানুষ খুন করতে পারে, তাঁরা অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে এই সিকিউরিটি কীভাবে দেয়া হবে?”

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা ভিসিকে আল্টিমেটাম দিলো, ভিসি কিন্তু সেখান গেলেন, তাঁরা ভিসিকেই আটকালো। ভিসির সঙ্গে যে টোনে তাঁরা কথা বলছে, কে ছাত্র কে ভিসি সেটাই তো বোঝা মুশকিল। শিক্ষকদের প্রতি আচরণ অন্তত সম্মানজনক হওয়া উচিত।”

শেখ হাসিনা আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, “আমরা মনে করি এরা হচ্ছে সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। তাঁরা এটা বোঝে না? এত সমর্থন পাওয়ার পর তাঁদের আন্দোলন আর কন্টিনিউ করার দরকার আছে?’”

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “তাঁদের মনে ক্ষোভ আছে, দুঃখ আছে, তাঁরা সেটা দেখাচ্ছে। আন্দোলন করছে, করুক। আমরাও তো আন্দোলন করে করেই এই জায়গায় এসেছি। আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো আমি কখনো যাই না।”

তিনি বলেন, “আমি বুঝি স্বজন হারানোর কষ্ট কেমন। তাঁর মা-বাবার কেমন লাগছে। আমি ৩৮ বছর পর মা-বাবা হত্যার বিচার পেয়েছি।”

প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে অতীতের কিছু হত্যাকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সাংবাদিকদের।

তিনি বলেন, “বুয়েট-এ ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সনি হত্যা হয়েছে। বুয়েটে আমাদেরও তো অনেকে হতাহত হয়েছে। কই বিচার হয়েছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি অবস্থা ছিল। অস্ত্রের ঝনঝনানি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ ও লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরেছে।

সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সংবাদ পত্র, সংবাদ সংস্থা সহ গণমাধ্যমের সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

Loading...