ভারতের বিপক্ষে কখনো টি-টোয়েন্টি সিরিজও জেতেনি বাংলাদেশ। আবার ভারতের ইতিহাসেও টানা তিনটি টি-টোয়েন্টি হারের ঘটনা বিরল। তাই রাজকোটে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি টাইগাররা জিতলে নতুন করে লেখা হতো অনেক রেকর্ড। যাহোক, সেটি হতে দেননি স্বাগতিক দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বাঁহাতি ওপেনার শিখর ধাওয়ান। নিজের শততম ম্যাচ খেলতে নামা রোহিত উপলক্ষ্যটি স্মরণীয় করেছেন ৮৫ রানের ইনিংসের মাধ্যমে।
উদ্বোধনী জুটিতে ১১৮ রান যোগ করার পথে ধাওয়ান করেছেন ৩১ রান; আর বোলাররা দিয়েছেন সামর্থ্যের প্রমাণ। এতেই বাংলাদেশকে আট উইকেটে হারিয়ে দিল্লির পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে ভারত। টাইগারদের করা ১৫৩ রানের সংগ্রহ পেরিয়ে যেতে ভারতকে খেলতে হয়েছে মাত্র ১৫.৪ ওভার।
তরুণ লেগস্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের কল্যাণে দুইটি উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ - যা শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে। বৃহস্পতিবারের (৭ নভেম্বর) জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনলো ভারত। ফলে শেষ ম্যাচেই নির্ধারিত হবে সিরিজ-জয়ী দল। শেষ ম্যাচ হবে ইন্দোরের বিধর্বা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে, আগামী রোববার।
রাজকোটের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে ১৫৪ রানের লক্ষ্যটা সহজই ছিল ভারতের জন্য। এটি একদম মামুলি হয়ে যায় দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার ঝড়ো- ব্যাটে। দু’জনের জুটিতে আসে ১১৮ রান। একটা সময় মনে হচ্ছিল দশ উইকেটেই জিতে যাবে ভারত।
তবে একাদশ ওভারে আমিনুল বিপ্লব ফিরিয়ে দেন ধাওয়ানকে। নিজের পরের ওভারেই তিনি ফেরান সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা রোহিতকেও। আউট হওয়ার আগে ধাওয়ান ৩১ ও রোহিত করেন ৮৫ রান। শততম ম্যাচের ইনিংসটিকে ছয়টি করে চার-ছক্কার মারে সাজান ভারতীয় অধিনায়ক।
মূলত উদ্বোধনী জুটিতেই জয় নিশ্চিত হয়ে যায় ভারতের। এরপর বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন লোকেশ রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার। রাহুল ১১ বলে আট ও আইয়ার করেন ১৩ বলে ২৪ রান।
এদিন টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ছয় উইকেটে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দারুণ সূচনা করেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাইম শেখ। দেখেশুনে খেলেছেন তাঁরা, অবস্থা বুঝে বল সীমানার বাইরে পাঠাতেও দ্বিধা করেননি। ফলে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিকে বিপদে ফেলতে বেগ পেতে হয়েছে ভারতীয় বোলারদের।
এর মধ্যে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শিশুসুলভ এক ভুল করে বসেন পান্ত। ইয়ুজবেন্দ্র চাহালের ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিটি ডাউন দি উইকেট খেলতে গিয়ে অনেকটাই এগিয়ে এসেছিলেন লিটন। উইকেটকিপার পান্ত সেই বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। লিটন তখন সাজঘরের পথে। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেলো পান্তর ভুলটা; উইকেটের সামনে গ্লাভস দিয়ে বল ধরেছেন তিনি। ফলে তৃতীয় আম্পায়ার নটআউট ঘোষণা করেন লিটনকে।
অবশ্য এরপর লিটন ইনিংস বেশিদূর নিতে পারেননি। চাহালের পরের ওভারের রানআউটের শিকার হন এই টাইগার-ওপেনার। ওভারের দ্বিতীয় বলটি পায়ে লাগলে দৌড় দিয়েছিলেন লিটন, পান্ত সেটা একটু সামনে এসে হাতে নিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন। ২১ বলে চার বাউন্ডারিতে গড়া লিটনের ২৯ রানের ইনিংসের ইতি ঘটে।
এরপর দারুণ খেলতে থাকা নাইমও ইনিংসের একাদশ ওভারে সাজঘরে ফেরেন। ওয়াশিংটন সুন্দরকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাউন্ডারিতে ক্যাচ হয়ে যান তরুণ এই ওপেনার। ৩১ বলে পাঁচ চারে তিনি তখন ৩৬ রানে।
সৌম্য সরকার তবু চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎ আউট হয়ে যান গত ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিম। ছয় বলে মাত্র চার রান করে চাহালের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ওই ওভারেই সৌম্যও ফিরলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১০৩ রানে হারায় চার উইকেট।
সৌম্যর আউটটি নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। লিটনের স্ট্যাম্পিংয়ের সময় যেভাবে বল ধরেছিলেন পান্ত, অনেকটা সেভাবেই স্ট্যাম্পের সামনে থেকে আরেকবার বল ধরে ফেলেন তিনি। ফলে তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হতে হয়। সেখানে ঘটে আরেক ঘটনা, রিপ্লে দেখে সৌম্যকে ‘নটআউট’ ঘোষণা করেছিলেন থার্ড আম্পায়ার। কিন্তু পরক্ষণেই জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ‘আউট’।
২০ বলে দুই চার আর এক ছক্কায় সৌম্য করেন ৩০ রান। এরপর আফিফ হোসেন সাজঘরের পথ ধরেন আট বলে মাত্র ছয় রান করে।
এরপর দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ। মারমুখী ব্যাটিংই করেছেন; কিন্তু যতোটা ঝড় তোলার দরকার ছিল, সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেননি টাইগার-অধিনায়ক। ২১ বলে চার বাউন্ডারিতে ৩০ রান করে চাহারের শিকার হন তিনি।
এরপরের ব্যাটসম্যানরাও পারেননি টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং করতে। মোসাদ্দেক হোসেন নয় বলে সাত ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব পাঁচ বলে অপরাজিত থাকেন পাঁচ রানে। ফলে অল্প পুঁজিতেই থামতে হয় বাংলাদেশকে।
ভারতের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল। চার ওভারে ২৮ রান খরচায় দুইটি উইকেট নেন এই লেগস্পিনার।