loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিশ্রুত চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী


জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিশ্রুত চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা ও ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’র দক্ষিণ-এশীয় আঞ্চলিক অফিস উদ্বোধন করেছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই আমি জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলার পাশাপাশি এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুত চাঁদার পরিমাণ বাড়াতে সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা এবং জিসিএ’র সভাপতি ও সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি-মুন যৌথভাবে বাংলাদেশে জিসিএ’র আঞ্চলিক অফিস ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। ঢাকায় আঞ্চলিক শাখার এই উদ্বোধন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, এই অফিস এই অঞ্চলে ‘সেন্টার অফ এক্সিলেন্স’ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন সমস্যা সমাধানের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে, এই অফিসটি বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সর্বোত্তম অভিযোজন সমস্যার সমাধানে কাজ করবে এবং এর মাধ্যমে দেশগুলো পরস্পরকে সহায়তা করবে। এই অঞ্চলের অভিযোজন সমাধান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাওয়ানোর উপায় বের করতে এটা হবে একটি সেন্টার অফ এক্সিলেন্স।’

ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং জিসিএ’র সভাপতি ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি-মুন এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রোটারড্যামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রফেসর ড. প্যাট্রিক ভি. ভার্কুজেন।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং পরিবেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এবং ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানসহ দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীবৃন্দও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা এটিও আশা করেন যে, জিসিএ ঢাকা অফিস আগামী দুই বছরের জন্য ইউএনএফসিসিসি প্রক্রিয়াধীন জলবায়ুভিত্তিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ও ভালনারেবল-২০’র সভাপতির পদ লাভে আমাদের সাহায্য করবে। প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘমেয়াদে ডেল্টা কোয়ালিশনকে সহায়তার উপায় বের করতে জিসিএ’র প্রতি আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায়ও দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার আহ্বান জানান।

এ-প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমাদের এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো বিপর্যয়ে পরস্পরকে দূরে না রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা অত্যন্ত জরুরি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়া ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, আকস্মিক বড় ধরনের বন্যা, ভূমিধস ও তুষারধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। পরিস্থিতি এতোটাই শোচনীয় যে, তাপমাত্রা যদি আর মাত্র ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও বৃদ্ধি পায়, তবে বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমাদের নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষের ঝুঁকির কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ ও অন্যান্য পরিবেশ বিপন্নতা থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ২০০৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ স্ট্রাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্লানের আওতায় বিভিন্ন মিটিগেশন ও অ্যাডাপটেশন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি এবং অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়নে আমদের নিজস্ব সম্পদ থেকে এ-পর্যন্ত ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর জিডিপির এক শতাংশ অ্যাডাপটেশনে ব্যয় করে আসছে, যার পরিমাণ বছরে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে ১০০ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান-২১০০’ নামে পরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত একদশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে বিশ্বে প্রায় ৭০ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর অর্ধেকই এতদঞ্চলের। তিনি বলেন, জনগণ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধকল সেরে উঠতে না উঠতে আরেকটি আঘাত হানে। এর অবসানে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বৃহত্তর স্থিতিস্থাপকতা প্রয়োজন। 

শেখ হাসিনা এই চমৎকার অনুষ্ঠান আয়োজন এবং এতে যোগ দেয়ার জন্য জিসিএ চেয়ার বান কি-মুন, ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ও জিসিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রফেসর ড.প্যাট্রিক ভি. ভার্কুইজেনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা এক সঙ্গে লড়াই করবো, এক সাথে কাজ করবো এবং একসঙ্গে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করবো।’

বান কি-মুন সাফল্যের সংগে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘গোটা বিশ্বের মানুষ জানে সাফল্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সেরা উদাহরণ। তাই আমরা ঢাকায় জিসিএ আঞ্চলিক অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ডাচ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জিসিএ আঞ্চলিক অফিস প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকাকে বাছাই করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি হবে জিসিএ’র প্রথম আঞ্চলিক অফিস। তিনি বলেন ‘ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যাডাপটেশনে বাংলাদেশের নেতৃত্বের এটি পরিষ্কার লক্ষণ।’

ঢাকার আগারগাঁওতে পরিবেশ অধিদপ্তরের নতুন ভবনে জিসিএ আঞ্চলিক সেন্টার হচ্ছে।

Loading...