নর্থ মেসিডোনিয়ার বিপক্ষে পরাজিত হয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অঘটনের শিকার হয়েছে জার্মানি। বুধবার (৩১ মার্চ) ঘরের মাঠে ২-১ গোলে পরাজয়ের মাধ্যমে বাছাইপর্বের ২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করলো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশটি। এর মাধ্যমে জুলাইয়ে বিদায় নিতে যাওয়া কোচ জোয়াকিম লো‘র উপর চাপ আরও বাড়লো।
ডুইসবার্গে শেষ বাঁশি বাজার পর লো বলেছেন, ‘হতাশাটা অনেক বড়।’
মিডফিল্ডার এলিফ এলমাস ম্যাচ শেষের পাঁচ মিনিট আগে মেসিডোনিয়ার হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন। এর আগে ৩৭ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গোরান পানডেভের গোলে প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে এগিয়ে গিয়েছিল সফরকারী দল। ইকে গুন্ডোগানের পেনাল্টিতে ৬৩ মিনিটে সমতায় ফেরে জার্মানি।
বিশ্বফুটবলে চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি সর্বোচ্চ আসরে কখনোই খেলতে ব্যর্থ হয়নি। যদিও দেশটি ১৯৩০ সালে প্রথমবারের আয়োজনে খেলেনি এবং ১৯৫০ সালে নিষিদ্ধ ছিল।
ইতোমধ্যে লো’র দল গ্রুপ জি-তে তৃতীয় স্থানে নেমে গেছে। শীর্ষে থাকা আর্মেনিয়ার সাথে তিন পয়েন্ট পিছিয়ে থাকার পাশাপাশি মেসিডোনিয়ার কাছে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে।
২০০১ সালে ইংল্যান্ডের কাছে সর্বশেষ বাছাইপর্বে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল জার্মানরা। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
লো বলেছেন, ‘আইসল্যান্ড ও রোমানিয়াকে হারিয়ে আমরা প্রথম দুটি ম্যাচে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল তিন ম্যাচে পূর্ণ নয় পয়েন্ট তুলে নেয়া। কিন্তু, নিজেদের ভুলেই আজ আমরা পরাজিত হয়েছি।‘
এর মাধ্যমে জাতীয় দলের মন্দ ফর্মের আরও একবার পুনরাবৃত্তি হলো। গত নভেম্বরে স্পেনের কাছে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে লজ্জায় পড়েছিলেন লো’র শিষ্যরা। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েও হতাশ করেছিলেন তাঁরা। বুধবারের পরাজয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা ১৮ ম্যাচে জয়ের বৃত্ত থেকে ছিটকে পড়লো জার্মানি।
১৫ বছরের মেয়াদ শেষে জুলাইয়ে ইউরো ২০২০ শেষে জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন লো।
দলের অস্থায়ী অধিনায়ক গুন্ডোগান বলেছেন, ‘মূল বিষয় হলো – নর্থ মেসিডোনিয়া মাত্র দুইবার আমাদের গোলবারের সামনে এসেছে এবং দুটো গোলই করেছে। এটা তাঁদের জন্য খুবই সহজ ছিল। আমরাও সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু মাত্র একটি গোল করতে পেরেছি।‘
জুনের ইউরো ২০২০ সামনে রেখে প্রস্তুতি ম্যাচের আগে জার্মানির আর কোনো ম্যাচ নেই। বাছাইপর্বে অনেকটা সহজ গ্রুপে পড়েও নিজেদের মেলে ধরতে না পারাটা পুরো দলের অনেক বড় একটি ব্যর্থতা। ইউরোতে গ্রুপ পর্বে পর্তুগাল, বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও হাঙ্গেরির কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। যে-কারণে ইউরোতেও জার্মানরা কতটা এগোতে পারবে – তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
গুনডোগান বলেন, ‘আগামী দুই মাসে আমাদের সামনে খেলার সুযোগ নেই। মে মাসের শেষ থেকে আমরা আবারো প্রস্তুতি শুরু করবো।‘
দ্বিতীয়ার্ধে বদলি বেঞ্চ থেকে উঠে আসার পর ম্যাচের স্কোর যখন ১-১ ছিল তখন চেল্সি স্ট্রাইকার টিমো ওয়ার্নার গোলের একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। আর বি লাইপজিগের সাবেক এই স্ট্রাইকার ক্লাব ও দেশের হয়ে সর্বশেষ ৩১টি ম্যাচে মাত্র দুই গোল করেছেন – যা খুবই হতাশার। ৮০ মিনিটের গুন্ডোগানের দারুণ এক পাস থেকে তিনি গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন।
জার্মানির চেয়ে ৫২ ধাপ পিছিয়ে বিশ্ব রেঙ্কিংয়ের ৬৫তম স্থানে থাকা নর্থ মেসিডোনিয়া প্রমাণ করলো – বড় দলের বিপক্ষেও কিভাবে সাহসের সাথে এগিয়ে যাওয়া যায়। ম্যাচের শুরুতে বেশ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করার খেসারত শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকদের দিতে হয়েছে। এর মধ্যে বায়ার্ন মিউনিখ উইঙ্গার সার্জ গনাব্রির গোল মিসের বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল জার্মানদের।
প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে অভিজ্ঞ পানডেভ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৩৮তম গোল করে সফরকারীদের এগিয়ে দেন। ২০১২ সালে সুইডেনের কাছে ৪-৪ গোলে ড্রয়ের পরে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জয়বিহীন থাকার শঙ্কায় পড়ে জার্মানি। ৬৩ মিনিটে ডি বক্সের ভিতর লেরয় সানেকে ফাউলের অপরাধে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে গুন্ডোগান দলকে সমতায় ফেরান। ম্যানুয়েল নয়ার বিশ্রামে থাকায় অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন গুন্ডোগান।
ওয়ার্নারের গোল মিসের সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগায় নর্থ মেসিডোনিয়া। ওয়ার্নারের চেল্সি সতীর্থ এন্টোনিও রুডিগারকে কাটিয়ে ডিনামো জাগ্রেবের আরিয়ান আডেমি বল বাড়িয়ে দেন এলমাসের দিকে। মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানকে পরাস্ত করে দলকে জয় উপহার দিতে ভুল করেননি এলমাস।