নিজেদের মাঠে লুক শ-এর গোলে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। তাঁদের জমাট রক্ষণ ভেঙে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে লিওনার্দো বোনুচ্চির লক্ষ্যভেদে সমতা ফিরলো ইতালি। বাকি সময়ে আর গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমার নৈপুণ্যে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে ৫৩ বছর পরে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় করলো আজ্জুরিরা।
রোববার (১১ জুলাই) রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ইউরো ২০২০-এর ফাইনালে গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে পেনাল্টি শুটআউটে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে রবার্তো মানচিনির দল। গত বিশ্বকাপে উঠতে ব্যর্থ হওয়া দেশটি ইউরোপের সেরা ফুটবল আসরের শিরোপা জিতে সেই দুঃখ অনেকটাই ঘোচালো। এদিন নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পরে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলাও শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়।
টাইব্রেকারে ইতালির পক্ষে প্রথম শট নিয়ে জালে পাঠান ডমেনিকো বেরার্দি। ইংল্যান্ডের হয়েও সফল কিক নেন হ্যারি কেইন। এরপর আন্দ্রেয়া বেলোত্তির শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। হ্যারি ম্যাগুইয়ার দ্বিতীয় শটে গোল করলে এগিয়ে যায় ইংলিশরা; কিন্তু এই সুবিধা ধরে রাখতে পারেননি গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা।
ইতালির লিওনার্দো বোনুচ্চি ও ফেদেরিকো বার্নারদেস্কি লক্ষ্য ভেদ করেন। এরপর জর্জিনহোর নেওয়া শেষ শট আটকে দেন পিকফোর্ড। যাহােক, তাঁর দুটি সেইভও ইংল্যান্ডকে জেতাতে পারেনি; কারণ, শেষ তিনটি স্পট-কিকেই গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁর সতীর্থরা।
মার্কাস র্যাশফোর্ডের শট দুর্ভাগ্যজনকভাবে পোস্টে লাগার পরে ডোনারুমা প্রথমে ফিরিয়ে দেন জ্যাডন স্যাঞ্চোর কিক। শেষে বুকায়ো সাকার শটও তিনি ঠেকিয়ে দিলে উল্লাসে মেতে উঠে ইতালিয়ানরা।
ইউরোপিয়ান কাপে ইতালির এটি দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে দেশটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। ২০০০ ও ২০১২ সালে ফাইনাল খেললেও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। অন্যদিকে, প্রথমবারের মতো আসরের ফাইনাল খেললো ইংল্যান্ড।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। পাল্টা আক্রমণে কিয়েরান ট্রিপিয়ার ক্রস ফেলেন ডি-বক্সে। ফাঁকায় থাকা আরেক ফুলব্যাক শ জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন। ইউরোর ইতিহাসে ফাইনালের দ্রুততম গোল এটি (এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ড)।
পিছিয়ে পড়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় থাকা ইতালি অষ্টম মিনিটে ভালো জায়গায় ফ্রি-কিক পায়। যাহোক, ফরোয়ার্ড লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি পিকফোর্ডকে। অষ্টাবিংশ মিনিটে তাঁর আরেকটি শট লক্ষ্য থাকেনি।
৩৫তম মিনিটে ডেকলান রাইসকে এড়িয়ে একক নৈপুণ্যে আক্রমণে ওঠেন ইতালির ফেদেরিকো কিয়েসা। প্রতিপক্ষের আরেকটি চ্যালেঞ্জ সামলে ডি-বক্সের বাইরে থেকে তিনি যে-শট নেন, তা অল্পের জন্য জালে পৌঁছায়নি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে চিরো ইম্মোবিলের শট আটকে দেন ইংল্যান্ডের সেন্টার-ব্যাক জন স্টোন্স। মার্কো ভেরাত্তির ফিরতি শট অনায়াসে লুফে নেন পিকফোর্ড।
রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নেওয়া ইংল্যান্ড বিরতির পরও প্রায় একই ধাঁচে খেলতে থাকে; ইতালির একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়েছে দলটি। যাহােক, এক পর্যায়ে আজ্জুরিরা ঠিকই সমতা ফেরে।
৫১তম মিনিটে ইনসিনিয়ে আরেকটি ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ছয় মিনিট পরে তাঁর শট ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক।
অসাধারণ খেলতে থাকা কিয়েসা বারবারই প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ভীতি ছড়াচ্ছিলেন। ৬২তম মিনিটে তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন পিকফোর্ড। দুই মিনিট পরে ডোনারুমাও স্টোন্সের হেড প্রতিহত করেন।
৬৭তম মিনিটে বোনুচ্চি গোল শোধ করে দেন। কর্নার থেকে ভেরাত্তির হেড পিকফোর্ড পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি; বল পোস্টে লেগে ফিরে আসার সময় গোলমুখ থেকে জালে জড়িয়ে ইতিহাস গড়েন বোনুচ্চি। ইউরোর ফাইনালে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতা এখন তিনি (৩৪ বছর ৭১ দিন)।
নির্ধারিত সময়ের বাকি অংশে এবং অতিরিক্ত সময়ে ইতালি আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও গোল করতে পারেনি। ইংল্যান্ড পাল্টা আক্রমণে উঠলেও গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই দল একাধিক খেলোয়াড় বদল করলেও স্কোরলাইনে পরিবর্তন আসেনি। পরে, টাইব্রেকারে জয়ের নায়ক হয়ে উঠেন ডোনারুমা।