জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার (১২ ভাদ্র) শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালিত হয়েছে। তিনি ১৯৭৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) ইন্তেকাল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। কর্মসূচির মধ্যে ছিল – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ-সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন – মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল আলম, যুগ্মসচিব অসীম কুমার দে, বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
নজরুলের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, নজরুলের জীবন, সাহিত্য, সংগীত ও সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা, রচনাবলি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, নজরুল স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর শিমলা ও দরিরামপুরকে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
দরিরামপুর বিচুতিয়া বেপারী বাড়িতে নজরুলবিষয়ক জাদুঘর, পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই বাড়ির কাছেই স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক বটতলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর এবং কবি পৌত্রী ও কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খিলখিল কাজী।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এই উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আলোচনা সভা ও নজরুল স্মৃতিবিজড়িত ‘স্মৃতি কক্ষ’ উদ্বোধন করা হয়। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও, তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।