দেশে প্রায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ খাদ্য অপচয় হচ্ছে। একই সাথে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। অন্যদিকে, পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে ভুগছেন নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠী। উপরোক্ত দৃশ্যকল্পটি আরও পরিস্কার হয়ে ওঠে পবিত্র মাহে রমজানে; অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত খাবারের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। বিলাসি ইফতারির নামে ডাস্টবিনে জায়গা পাচ্ছে অতিরিক্ত খাবার। অন্যদিকে, শুধু পানি আর শুকনো মুড়ির নির্ভরতায় রোজা আছেন দেশের সহস্র মানুষ।
টেকসই লক্ষমাত্রা ৩ (SDG-3) অর্জনে ও জনগণের মাঝে নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস এবং অপচয়রোধে সচেতনতা তৈরী করার প্রকল্প পরিকল্পনার লক্ষ্যে জেনল্যাব ও এইচ এন্ড এইচ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘হেলথ ও ফুড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ে গত ৯ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। জেনল্যাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাতুল দেব এবং এইচ এন্ড এইচ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার এম. সাফাক হোসেনের পরিকল্পনায় ও রাতুল দেবের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড۔ এম. সাখাওয়াত হোসেন (অব.), জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ।
গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সরকারি দপ্তর থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম হোসেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের এনএইচটিটিএই এফ এন্ড বি প্রোডাকশন বিভাগীয় প্রধান জাহিদা বেগম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর থেকে মো. রেজাউল করিম, হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার এবং প্রেসিডেন্ট ডা. শেখ মইনুল খোকন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি থেকে এক্সেকিউটিভ বডির দুইজন প্রতিনিধি, ইউনিস্যাব প্রেসিডেন্ট শেমি ওয়াদুদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির সদস্য ও বিএনও লুব্রিক্যান্টস-এর পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, জেনল্যাবের যোগাযোগ ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ইশরাত বিনতে রউফ, জেন ল্যাবের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক চৌধুরী হাসান ইবনে ওবায়েদ, জেসিএই ঢাকা নর্থ প্রেসিডেন্ট শাখাওয়াত হোসেন সবুজ, স্পন্সর আরমেক সার্ভিসেস লিমিটেড-এর প্রতিনিধি মেজর নুরুল আফসার (অব.)-এর প্রতিনিধি মেজর খালেদ প্রমুখ।
জেন ল্যাবের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাতুল দেবের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনা শুরু হয়। তিনি বলেন, আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্দ্বিধায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩ এবং ১২ অর্জনের যাত্রায় এই আলোচনা প্রয়োজনীয়। তিনি আরও বলেন, আজকের এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সকলের মতামত তুলে ধরা এবং একটি গঠনমূলক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।
গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম হোসেনের বক্তব্যের মাধ্যমে গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চারিত হয়। এককালের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার রোমাঞ্চকর বুলির মাধ্যমে তাঁর মতামত তুলে ধরেন, পাশাপাশি চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্ষতিকারক খাদ্যদ্রব্য যেমন কোমল পানীয় এবং অন্যান্য প্যাকেটজাত পণ্যের প্রচারণার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের কাছে অনুরোধ জানান।
গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি মনে করি, আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের স্টেট পলিসিতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দেশে সরকারের উপর এককভাবে দায়িত্ব প্রেরণ করলে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া কঠিন, বরং সরকার যদি ছোট বড় বেসরকারি ও যুবসংগঠনের সাথে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করে, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষণীয় হয়ে উঠবে।
জেন ল্যাবের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা ব্যবস্থাপক চৌধুরী হাসান ইবনে ওবায়েদ আলোচনায় একটি নতুন দৃষ্টিকোণ সংযোজন করেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরীতে যুব সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। এই বিষয়ে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড۔ এম.সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা স্বাভাবিক জীবনে আমাদের প্রয়োজনের অধিক খাদ্য ক্রয় এবং তৈরী করি, যার দরুণ আমাদের খাদ্য অপচয় হয়। পরিসংখ্যান মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বার্ষিক ৭৫ টন খাবার অপচয় করা হয়। তিনি মাননীয় সংসদ সদস্যের প্রতি অনুরোধ করেন যাতে খাদ্যের অপচয়রোধে কার্যকরী নীতিমালা প্রণয়ণ করা হয়।
জেন ল্যাবের যোগাযোগ ও জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ইশরাত বিনতে রউফ জেন ল্যাবের পক্ষ থেকে সরকার, এনজিও, যুব উন্নয়ন সংস্থাগুলোর একযোগে জাতীয়ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘নিউট্রিশন প্লেট টেস্ট’ পাইলট প্রজেক্ট-এর প্রস্তাব রাখেন। এই প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টিবন্টন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অধিদপ্তর প্রতিনিধি মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের দেশে যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু রেগুলেশন নির্ধারিত থাকে। দুঃখজনকভাবে খাদ্য ব্যবসার ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত এরূপ কোনো রেগুলেশন প্রেরণ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন খাদ্যনিরাপত্তা অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং এবং পরিকল্পনার ভিত্তিতে খুব শীঘ্রই এইসব বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মাননীয় সংসদ সদস্যের বিজ্ঞাপন বিষয়ে মন্তব্যের প্রতুত্তরে তিনি বলেন, তাঁরা আসন্ন জুন মাসের সময়কালে বিজ্ঞাপনবিষয়ক একটি নীতিমালা প্রেরণ করবেন।
পরিশেষে সঞ্চালকের বক্তব্যে পুরো আলোচনার মূল প্রত্যাশা ফুটে ওঠে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে খাদ্য-সমস্যা সবসময়ে আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। অপুষ্টির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে জনসংখ্যার সিংহভাগের বাড়ছে হৃদরোগসহ অন্যান্য দূরারোগ্য রোগের ঝুঁকি। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পদক্ষেপের অধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে সাধারণ জনগণের সচেতন আচরণ। নিজেদের অবস্থান থেকে সামান্য সচেতনতা খাদ্যের অপচয়রোধ ও স্বাস্থ্যকর জীবনপদ্ধতি নির্মাণের পাশাপাশি টেকসই লক্ষ্যমাত্রা-৩ (SDG-3) অর্জনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
জেন ল্যাব
জেন ল্যাব একটি যুব নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ। বাংলাদেশি তরুণদের দেশ ও সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে দেয়। মূলত: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা – ৩, ৫, এবং ১৬ কেন্দ্র করেই জেন ল্যাবের কর্ম পরিধি গড়ে ওঠে। জেন ল্যাবের পূর্ববর্তী পার্টনারদের মধ্যে রয়েছে – ইউএনডিপি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন।
সম্প্রতি জেন ল্যাব ইয়াং হিউম্যানিটারিয়ান অফ দি ইয়ার ক্যাটাগরিতে দি ডেইলি স্টার কর্তৃক ইয়াং হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড এবং সংস্কৃতি ও যোগাযোগ বিভাগে ইয়াং বাংলা কর্তৃক জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।
এইচ এন্ড এইচ ইন্টারন্যাশনাল
এইচ এন্ড এইচ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন একটি রিসার্চ, সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পমূলক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মূল লক্ষ্য সমাজের প্রশাসনিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, এক্সপার্ট এবং যুব সমাজের সদস্যদের নিয়ে একত্রে সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম করা। তাছাড়া, এসডিজি নিয়ে দেশের পজিটিভ চেঞ্জ নিয়ে কাজ করা।
– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
