loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • লিভারপুল হারলো এভারটনের কাছে, ম্যানইউ-এর শেফিল্ড-বাধা অতিক্রম

  • শুরু হলো স্বাধীনতা দিবস জিমন্যাস্টিক্স প্রতিযোগিতা ২০২৪

  • জাভি এই মৌসুম শেষেই বার্সা ছাড়বেন না

  • নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

  • ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ইউভেন্টাস

যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন


যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, জাতীয় সংসদের উপনেতা, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বাদআসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। জানাজায় দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। খবর স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের।

দাফনের আগে বনানী কবরস্থানে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ পৌঁছুলে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে পুলিশের একটি চৌকশ দল তাঁকে ‘গার্ড অফ অনার’ প্রদান করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এ-সময় উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম এই কাণ্ডারী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। তিনি উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে গত অগাস্ট মাসের শেষের দিকে ঢাকা সিএমএইচ-এ ভর্তি হয়েছিলেন।

সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা) আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের সংকটকালীন সময়ে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

বনানী কবরস্থানে নেওয়ার আগে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানায় তাঁর প্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিকেলে সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। সেখানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাগণ উপস্থিত ছিলেন। এ-সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এবং দলের পক্ষ থেকে সাজেদা চৌধুরীর মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে ঢাকা-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এর আগে, সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মরহুমার কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানান, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। এছাড়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে সাজেদা চৌধুরীর মরদেহে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে মরহুমার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

এরপর, ১৪ দল ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদসহ সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, মহিলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালাম্নাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ মরহুমার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা সোমবার সকাল ১১টায় নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

সাজেদা চৌধুরী ১৯৫৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সময়ে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কলকাতার গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

সাজেদা চৌধুরী ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালক, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনার এবং ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি ফরিদপুরের কৃষাণপুর ইউনিয়ন (ফরিদপুর-২; নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুর) থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়ী হন। দশম সাধারণ নির্বাচনেও তিনি এই অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মাতা সৈয়দা আছিয়া খাতুন। 

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সাজেদা চৌধুরী স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

Loading...