রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লন্ডনে জনাকীর্ণ রাস্তায় ঐতিহাসিক জমকালো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সারাবিশ্বের নেতারা অংশ নেন। টেমস নদী দিয়ে রাণীর কফিনটি বহন করার সময় তাঁকে সম্মান জানাতে ক্রেনগুলোকে নত করা হয়েছিল। খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দেশ শাসনকারী রাণী গত ৮ সেপ্টেম্বর বালমোরালে ৯৬ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অনেক সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতে এবং শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গত কয়েক দিন ধরে অপেক্ষা করেছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরে, রাণীর পতাকাযুক্ত কফিন ইম্পেরিয়াল স্টেট ক্রাউন উইন্ডসর ক্যাসেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে তাঁর বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ, মা রাণী এলিজাবেথ এবং বোন রাজকুমারী মার্গারেটের সমাধির পাশে বরাবর সমাহিত করা হয়েছে। তাঁর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের কফিন, যিনি গত বছর ৯৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁর সমাধির পাশে স্থানান্তর করা হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের সম্রাট নারুহিতো থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ দুই হাজারের বেশি মানুষ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে যোগ দেন। রাণীর বড় ছেলে এবং উত্তরসূরি রাজা তৃতীয় চার্লস (৭৩) শোকযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। তাঁর তিন ভাইবোন এবং তাঁর উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম তাঁদের সাথে যোগ দেন।
চার্লস রোববার বলেছেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী কুইন কনসর্ট ক্যামিলা সমবেদনা ও শোকবার্তা পেয়ে গভীরভাবে অভিভূত। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই আমাদের শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুত। আমি কেবল সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
রাণীর মৃত্যুর পরে রাজপরিবারের দুই সদস্য – রাণীর দ্বিতীয় ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং চার্লসের ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি সাময়িকভাবে রাজকীয় আনুষ্ঠিকতায় ফিরে আসেন।
রাষ্ট্রীয় এই অন্তেষ্টিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসও ছিলেন, যাঁকে রাণী তাঁর মৃত্যুর মাত্র দুই দিন আগে পঞ্চদশ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
ট্রাসের পূর্বসূরি এবং তাঁর সমকক্ষরা এবং ব্রিটেনের বাইরে ১৪টি কমনওয়েলথ দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে যোগ দেন।
রাণীর মৃত্যুতে তাঁর ৭০ বছরের রাজত্বকালে ব্রিটেনে তাঁর রাজত্ব এবং অতীতের উত্তরাধিকার, এর বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যতে কি হতে পারে, সেইসাথে আজীবন সেবা ও কর্তব্যের মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটেছে। প্রায় ৬,০০০ সামরিক কর্মী এই গৌরবময় রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নেয়।
ব্রিটেনের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অ্যাডমিরাল টনি রাদাকিন, এটিকে রাণীর জন্য শেষ কর্তব্য বলে অভিহিত করেছেন। স্থানীয় সময় সকাল ১১:০০ টায় শুরু হওয়া রাষ্ট্রীয় অন্তেষ্টিক্রিয়া লন্ডনের সর্বকালের সবচেয়ে কড়া পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ওয়েস্টমিনস্টার হলের দরজাগুলো সকাল ৬:৩০ এর কিছু পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কফিনটি রয়্যাল নেভির সদস্যরা অ্যাবেতে নিয়ে যায়।
পার্লামেন্টের হাউসের প্রান্তে এলিজাবেথ টাওয়ারের শীর্ষে বিগ বেন ঘণ্টা বাজায় এবং তোপধ্বনি করা হয়। টেলিভিশনে বিপুলসংখক দর্শক বিশ্বব্যাপী শেষকৃত্য অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীগণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁসহ কয়েকশ’ বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে যোগ দেন।
রাণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হয়েছে – যে-ভবনটিতে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ এবং রাজমুকুটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। জাতীয় পতাকায় ঢাকা এবং ওপরে রাজমুকুট শোভিত তার কফিনটি রাজকীয় নৌবাহিনীর সদস্যরা কামানবাহী গাড়িতে টেনে এখানে গির্জায় নিয়ে আসে।
শেখ হাসিনা রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন এবং বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।
এর আগে, রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে প্রয়াত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসে যান। তিনি ওয়েস্টমিনস্টার হলে রাণীর মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে একটি শোক বইতে স্বাক্ষর করেন। শেখ রেহানাও শোক বইতেও স্বাক্ষর করেন।