শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান দখল করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। লন্ডনে শনিবার (১৫ জুন) অনুষ্ঠিত ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে দলটি।
এটি অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ জয়। পাঁচ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ম্যাচে হেরেছে অজিরা। ফলে সর্বোচ্চ আট পয়েন্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে পিছনে ফেলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন অস্ট্রেলিয়া। সাত পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে এই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার। দলটির সংগ্রহ পাঁচ ম্যাচে মাত্র চার পয়েন্ট।
ওভালে টস জিতে আগে ব্যাট করে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে সাত উইকেটে ৩৩৪ রানের বিশাল স্কোরেই জয়ের ভিত গড়ে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বোলিং-আক্রমণে বেশি দূর এগোতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মিচেল স্টার্ক ও রিচার্ডসনের বোলিংয়ে ২৪৭ রানে অলআউট হয় দলটি।
স্টার্ক চারটি, রিচার্ডসন তিনটি ও প্যাট কামিন্স দুই উইকেট শিকার করেন। এদিন ম্যাচ-সেরা নির্বাচিত হয়েছেন টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সেঞ্চরি করা ফিঞ্চ।
শ্রীলঙ্কার সামনে ৩৩৫ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল, তবে শুরুটা ভালোই করেছিল দলটি। উদ্বোধনী জুটিতে কুশল পেরেরা ও দিমুথ করুনারত্নে ঝড়ো ব্যাটিং করে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে সফলও হয় এই জুটি, কারণ সূচনা-জুটিতেই দল করে ১১৫ রান। পেরেরার বিদায়ে ভাঙে তাঁদের জুটি। মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৫২ রান করেন পেরেরা। তাঁর ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ছক্কার মার।
পেরেরা আউট হলেও সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে ছিলেন অপর ওপেনার করুনারত্নে। রিচার্ডসনের বলে ম্যাক্সওয়েলকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১০৮ বলে নয় বাউন্ডারিতে লঙ্কান অধিনায়ক করেন ৯৭ রান। দলীয় ১৫৩ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ে রানের গতি কিছুটা কমতে থাকে শ্রীলঙ্কার।
ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি থিরিমান্নে। মাত্র ১৬ রান করে আউট হলে ১৮৬ রানে প্রথম তিন উইকেট হারায় ১৯৯৬-এর শিরোপাজয়ী দেশটি। তবে কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস মিলে দলকে ২০০ রানের ঘরে পৌঁছে দেন । দলীয় ২০৫ রানে ম্যাথুস ও ২০৯ রানে মিলিন্দা সিরিবর্ধনের দ্রুত বিদায়ে বেশ চাপে পড়ে লঙ্কানরা।
ম্যাথুস নয় রান, সিরিবর্ধনে করেন মাত্র তিন রান। থিসারা পেরেরা রানের খাতা খোলার আগে বিদায় নিলে ২১৭ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে এশিয়ার দলটি।
ম্যাথুসকে কামিন্স ফেরানের পরে সিরিবর্ধনে ও পেরেরাকে ফেরান মিচেল স্টার্ক। ২২২ রানে মেন্ডিসকে আউট করে স্টার্ক শ্রীলঙ্কার জয়ের স্বপ্ন একেবারে শেষ করে দেন। ৩৭ বলে দুই ছক্কায় ৩০ রান করেন মেন্ডিস। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার স্কোর থেমে যায় ৪৫.৫ ওভারে ২৪৭ রানে।
এর আগে অধিনায়ক ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে জয়ের জন্য ৩৩৫ রানের বড় টার্গেট দেয় অস্ট্রেলিয়া। ফিঞ্চের সেঞ্চুরির পাশাপাশি স্টিভেন স্মিথের ৭৩ রান আর ম্যাক্সওয়েলের অপরাজিত ৪৬ রানের উপর ভর করে বিশাল স্কোর গড়ে দলটি।
দুই ওপেনার ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার দলকে পৌঁছে দেয় ৮০ রানে। ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে সরাসরি বোল্ড আউট হওয়ার আগে ৪৮ চলে ২৬ রান করেন এর আগের ম্যাচে শতরান করা ওয়ার্নার।
ওয়ার্নারকে হারানোর ধাক্কা সামলে নিতে ফিঞ্চ নতুন জুটি করেন ওসমান খাজাকে নিয়ে। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি খাজা। দলকে ১০০ রানে পৌছে ব্যক্তিগত মাত্র ১০ রান করে ডি সিলভার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন খাজা। খাজার বিদায়ে ফিঞ্চ নতুন জুটি করেন স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে। এই দু’জনের ব্যাটে ভর করেই বড় স্কোর করেছে অস্ট্রেলিয়া।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্টিভেন স্মিথের সঙ্গে ১৭৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ফিঞ্চ। এই জুটি আলাদা হওয়ার আগেই ২৭৩ রানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৭৩ রানে ফিঞ্চের বিদায়ে বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি।
দারুণ ইনিংস খেলেন অজি-দলপতি ফিঞ্চ। সেঞ্চুরির পাশাপাশি চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিকও এখন তিনি। ইসুরু উদানার বলে আউট হওয়ার আগে ৯৭ বলে সেঞ্চুরি করা ফিঞ্চ ১৩২ বলে ১৫টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় ক্যারিয়ার-সেরা ১৫৩ করেন।
দলীয় ২৭৪ রানে আউট হন স্মিথ। লাসিথ মালিঙ্গার বলে বোল্ড হওয়ার আগে স্মিথ ৫৯ বলে সাতটি চার ও একটি ছক্কায় ৭৩ রান করেন। অবশ্য ভালো করতে পারেননি শন মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি ও প্যাট কামিন্স। শন মার্শকে মাত্র তিন রানে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন উদানা। ক্যারি চার রান করলেও স্কোর-শিট খোলার আগেই রান আউট হন প্যাট কামিন্স।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে ডি সিলভা ও উদানা দুটি করে উইকেট শিকার করেন। মালিঙ্গা পেয়েছেন একটি উইকেট।