loader image for Bangladeshinfo

শিরোনাম

  • সুন্দরবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে

  • জিরোনার কাছে বার্সার হার, চার ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন রিয়াল

  • দ্বিতীয় ম্যাচেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের সহজ জয়

  • প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ

  • হালানের চার গোলে সিটির বড় জয়, জিতেছে আর্সেনালও

নানা সংকটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


নানা সংকটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সবুজ পাহাড়ঘেরা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা নিকেতন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর করে আছে নানামুখী সমস্যা। সারা বছর লেগে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আবাসন ও পরিবহন সংকট। নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে আবাসিক হলের পরিবেশ। পুরনো বইয়ের গোডাউনে পরিণত হচ্ছে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি । সেশনজট ও বিদ্যুৎবিভ্রাটে অতিষ্ট শিক্ষার্থীরা।

তবে চবি কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছু সমস্যা নিরসন প্রক্রিয়াধীন। কিছু জটিলতা দীর্ঘদিনের হওয়ায় তা নিরসনে সময় লাগছে।

আর কিছু আছে যা উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যা নিরসন করা হবে।

আবাসন সংকট: ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ৫১ বছরেও চবি শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়নি আবাসন সুবিধা। আজও প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীর কপালেই জোটেনি আবাসিক হলে থাকার সুযোগ। এর ফলে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার অপরিচ্ছন্ন ও বসবাসের অনুপযোগী কটেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ মাইল দূরে শহরে অত্যন্ত ব্যয়বহুল বাড়িভাড়া করে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসিক চাহিদা মেটানোর জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি হল রয়েছে। এসব হলে ৫ হাজার ৯৪ জনের থাকার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ২৩ হাজার ৮৭৬ শিক্ষার্থীর এ শিক্ষানিকেতনে এটি নিতান্তই নগণ্য।

বাড়ছে না খাবারের মান: চবির ১২টি আবাসিক হলেই নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে এসব হল ডাইনিংয়ে নিম্নমান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে হলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে খাবার খায়। এতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলোতে নিম্নমানের চালের ভাত দেয়া হয়। আর প্রতিদিন প্রায় একই তরকারি পরিবেশন করা হয়। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে একই ধরনের মাছ এবং মাংস সরবরাহ করা হয়। তাও আবার পরিমাণে খুবই কম, যা শিক্ষার্থীদের খাবারের চাহিদা মেটাতে পারে না।

পরিবহন সংকট: চবিতে পরিবহন সংকট দীর্ঘদিনের। ২৩ হাজার ৮৭৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে এখানে ছাত্র ১৫ হাজার ৪৫৫ ও ছাত্রী ৮ হাজার ৪২১। তাদের যাতায়াতে কোনো বাস সার্ভিস নেই। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। জানা যায়, চবিতে দুটি শাটল ট্রেন চলাচল করে। প্রতিটিতে ৭টি করে ১৪টি বগি আছে। প্রতি বগিতে ১৪৪টি করে মোট আসন আছে ২ হাজার ৫৯২টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আসন সংকটের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ, দরজা ও ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে। তবে একসময় শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি বাস থাকলেও বর্তমানে তা বন্ধ। ফলে রাতে শহর থেকে ক্যাম্পাসে যেতে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হয় দুর্ভোগের। পরিবহন দপ্তর বলছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থা অপ্রতুল। বর্তমানে শিক্ষকদের জন্য ২৬টি বাস, হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ির শিক্ষার্থীদের জন্য বিআরটিসি’র ১০টি, মহিলাদের জন্য তিনটি এবং নগরের শিক্ষার্থীদের জন্য দু’টি শাটল ট্রেন আছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য শাটল ট্রেন ও বাস বৃদ্ধি এবং শিক্ষকদের জন্য এসি বাসের দাবি থাকলেও তা পূরণ হয়নি।

সেশনজটে অস্থির শিক্ষার্থীরা: চবির ৪৭টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের অধিকাংশেই সেশনজট থাকলেও বর্তমানে এর পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। এর মধ্যে বাণিজ্য অনুষদের অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং ও কলা অনুষদের ইংরেজি বিভাগ সেশনজটে শীর্ষে।

চার বছরের অনার্স শেষ করতে লাগছে সাড়ে পাঁচ বছর। এক বছরের মাস্টার্স শেষ করতে লাগছে দেড় থেকে দুই বছর।

নতুন বইয়ের অপর্যাপ্ততা: পুরনো বই দিয়েই চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। শিক্ষকদের রেফারেন্স অনুযায়ী বই না পাওয়া, আর পেলেও বেশির ভাগ বই পুরনো ও সেকেলে হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন লাইব্রেরিতে আসা শিক্ষার্থীরা। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে বই কিনে পড়ালেখা করতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎবিভ্রাট নিত্যদিনের: বিদ্যুৎবিভ্রাটে চরম ভোগান্তির শিকার হন শিক্ষার্থীরা। বিদ্যুতের লুকোচুরিতে প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয় লেখাপড়ায়। অন্যদিকে রাতে লোডশেডিংয়ের সময় অন্ধকারে ছেয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাস। এ সময় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ, ডেস্কটপসহ মূল্যবান ইলেকট্রনিক জিনিস ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

চবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: চবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. কামরুল হুদা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সেশনজট অনেক কমে এসেছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে সেশনজট নেই বললেই চলে।’ শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘শাটল ট্রেন বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে। স্টেশনের যে প্লাটফরম আছে, সেখানে নয়টির বেশি বগি ঘোরানো যায় না। তাই আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে প্লাটফরমটি বড় করার প্রস্তাব করেছি, যাতে অন্তত ১২ থেকে ১৫টি বগি ঘোরানো যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট অচিরেই নিবারণ হবে বলে আশা করছি।

সূত্রঃ মানবজমিন

Loading...