আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ১৮৫ (লুইস ৫২, প্রেন্ডারগাস্ট ২৭, হান্টার ২৩; ফাহিমা ৩-৪৩, সুলতানা ২-২৯, নাহিদা ২-৫৫)
বাংলাদেশ: ৩৭.৩ ওভারে ১৮৬-৩ (সুপ্তা ৭২, পিংকি ৬১, জ্যোতি ১৮*; ম্যাগুইর ২-৩৮)
ফলাফল: বাংলাদেশ সাত উইকেটে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়ী
ম্যাচ-সেরা: শারমিন আক্তার সুপ্তা
সিরিজ-সেরা: ফারজানা হক পিংকি
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ড নারী দলকে সাত উইকেটে হারিয়েছে। সফরকারী দল শের-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার (২ ডিসেম্বর) প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে ১৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। জবাবে, নিগার সুলতানা জ্যোতিবাহিনী ৩৭.৩ ওভার খেলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। বাংলাদেশ নারী দল এর আগে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে কোনো দলকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি। টাইগ্রেসদের অবশ্য দুই ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া, বাঘিনীরা দেশের বাইরে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েকে তাঁদের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতায় বাংলাদেশ দলের ওডিআই বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার পথটা অনেকটা সহজ হয়েছে।
এই সিরিজ শুরুর আগে টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার জ্যোতি বলেছিলেন, বিশ্বকাপ অনেক পরে; তার আগে এই সিরিজটা তাঁরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চান। আয়ারল্যান্ড নারী দলকে ধবলধোলাইয়ের পরে এখন তিনি দাবি করতেই পারেন – তাঁরা সফল। সামনে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর (জানুয়ারিতে)। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তিনটি ম্যাচই জিতে যাওয়ার পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের অন্তত দু’টি জিতলেই বাংলাদেশ আগামী বছর জুলাইয়ে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে।
মিরপুরে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের মতো সোমবার শেষ ম্যাচটাও বাংলাদেশ জিতেছে সহজেই। সফরকারী দল টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক গ্যাবি লুইসের ফিফটির (৭৯ বলে ৫২) সৌজন্য ইনিংসের শেষ বলে অলআউট হওয়ার আগে ১৮৫ রান করেছিল। জবাবে বাংলাদেশ তিন উইকেট হারিয়ে ম্যাচ জিতেছে ৭৫ বল হাতে রেখেই। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে ওপেনার ফারজানা হক পিংকি ও শারমিন আক্তার সুপ্তা যেভাবে খেলছিলেন, তাতে এই জয়টা কেন নয় উইকেটেই এলো না – সেই আফসোস হতেই পারে!
সুপ্তা এবার এক বছরেরও বেশি সময় পরে ফিরে প্রথম ওয়ানডেতে আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। তিনি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়েও পাননি; মিস করেছিলেন চার রানের জন্য। এদিন যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল – প্রথম দিনের আক্ষেপ ঘোচাতে পারবেন। কিন্তু এই ওপেনার শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ৭২ রানে বিদায় নেন। তিনি ৮৮ বলের ইনিংসে ১১টি চার মেরেছেন।
এদিন লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় নয় রানে ওপেনার মুর্শিদা খাতুনকে হারায় তাঁরা। যাহােক, পিংকির সঙ্গে সুপ্তার ১৪৩ রানের জুটিই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছে – যা নারীদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। এর আগে ২০১৭ সালে রুমানা আহমেদ ও সুপ্তার গড়া ১২৭ রানের জুটি ছিল সর্বোচ্চ।
সোমবার দলীয় ১৫২ রানে সুপ্তাকে বিদায় করে জুটি ভাঙেন অ্যামি মাগুয়েইর। এরপর দ্রুত ফিরে যান পিংকি-ও; তাকেও ফেরান মাগুয়েইর। পিংকি ৯৯ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেছেন। তিনি ইনিংসটি খেলেন ছয়টি চারের সাহায্যে। দুই সেট ব্যাটারকে হারালে জ্যোতি (১৮*) বাকি কাজটুকু সোবহানা মোস্তারিকে (৭*) নিয়ে সহজেই শেষ করেন।
এদিন বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাফল্য পেয়েছেন কম-বেশি সবাই। তাঁদের মধ্যে ১০ ওভারে ৪৩ রানের খরচায় তিন উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল ফাহিমা খাতুন। সুলতানা ও নাহিদার শিকার দু’টি করে উইকেট।
টাইগ্রেসরা এই সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেও বেশ কিছু রেকর্ড গড়েছিল; যেমন – নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় (১৫৪) ও দলীয় সর্বোচ্চ রান (২৫২)।
বাংলাদেশের এমন রেকর্ডময় সিরিজটা নিজের করে নিয়েছেন পিংকি। তিনি টানা তিন ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। আর তিন ম্যাচে ১৭২ রান (৬১, ৫০ ও ৬১) করার স্বীকৃতি হিসেবে সিরিজ-সেরার পুরস্কারও পেয়েছেন তিনিই। অন্যদিকে কম যাননি সুপ্তাও। প্রথম (৯৬) ও শেষ (৭২) ম্যাচের ফিফটির বিপরীতে দ্বিতীয়টিতে করেন ৪৩ রান।