জাস্টিন ট্রুডো ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে সোমবার (৬ জানুয়ারি) এই ঘোষণা দেন। খবর – আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তাঁর দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পরে তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। লিবারেল পার্টির নেতা ট্রুডো নয় বছর ধরে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেছেন, নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরে তিনি পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সফলতার পেছনে পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। গত রাতে নৈশভোজের সময় সন্তানদের কাছে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান।
ক্যানাডার রাজধানী অটোয়ায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, কয়েক মাস ধরে বাধার কারণে পার্লামেন্ট পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। একই সঙ্গে কয়েক মাস ধরে উৎপাদনশীলতার ঘাটতি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন নতুন করে শুরু করার সময়। ক্যানাডার রাজনীতিতে উত্তাপ কমিয়ে আনার জন্য এটি দরকার। তিনি বলেন, ‘প্রতি সকালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জেগেছি, ক্যানাডিয়ানদের ভিন্ন মত মেনে নেওয়ার সক্ষমতা, উদারতা ও সংকল্প আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’ ট্রুডো আরও বলেন, ‘আমি এই দেশের জন্য, আপনার জন্য লড়াই করেছি।’
তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলা ট্রুডো বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ‘জটিল’ সময়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য পার্লামেন্টে একটি নতুন শুরু দরকার। তিনি আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন।
ট্রুডো ২০১৫ সালে লিবারেল পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে প্রথমবার ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। এরপর তিনি প্রায় এক দশক ধরে দেশটির নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে ট্রুডোর নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে লিবারেল পার্টি।
আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ক্যানাডায় নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রুডো তার আগেই দলীয় নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হলেন ।
পদত্যাগের জন্য বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের মধ্য থেকেও ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়ছিল। এখন ট্রুডোর উত্তরসূরি কে হতে পারেন – তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সেই তালিকায় ট্রুডোর সরকারের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মার্ক কারনির নাম আলোচনায় রয়েছে।
ট্রুডোর জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক কমে এসেছিল। তাঁর সরকার কয়েক দফা অনাস্থা ভোট কোনো মতে এড়াতে সক্ষম হলেও সমালোচকরা তাঁকে একাধিকবার পদ ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রুডো ২০২৫ সালের অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত চাপের মুখে পড়েছেন তিনি, যা তাঁকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ক্ষমতা গ্রহণ করেই ক্যানাডার পণ্য আমদানির বিরুদ্ধে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে – সে-বিষয়ে মতভেদের জেরে ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় প্রথম প্রকাশ্য বিদ্রোহের ঘটনা। এর পর থেকে পদত্যাগের জন্য ট্রুডোর ওপর চাপ বাড়তে থাকে।